শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে করোনাভাইরাস সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা।
নাসিমা বলেন, এই ৬৮টি ল্যাবের মধ্যে ৬৫টি ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ হাজার ৩৪টি নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। আগের নমুনাসহ পরীক্ষা হয়েছে ১৮ হাজার ৯৯টি, যাতে ৩ হাজার ৮০৯ জন শনাক্ত হন। এর আগে গত ১৭ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮ জন শনাক্তের কথা জানানো হয়েছিল। সেদিন ১৮ হাজার ৯২২জনের নমুনা সংগ্রহ করে একদিনে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ৫২৭টির পরীক্ষার কথা বলা হয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের পরই এখন বাংলাদেশ। উৎসস্থল চীনকে ছাড়িয়েছে এ তিনটি দেশই। এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৩০ হাজার ১৯৭ জনের করোনা পরীক্ষা করে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮৭ জনে। বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান কানাডাকে পেছনে ফেলে ১৭তম। আর এশিয়ার ৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। এর আগে রয়েছে ভারত, ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তান ও সৌদি আরব।
নাসিমা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৩ জন। গত ১৬ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ৫৩ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল। এ নিয়ে মোট মৃত্যু ১ হাজার ৭৩৮ জনের।
দেশে করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। প্রতিদিনই সুস্থ হয়ে উঠছেন বিপুল মানুষ।
নাসিমা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বাসা ও হাসপাতাল মিলিয়ে নতুন সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪০৯ জন। এ নিয়ে মোট ৫৫ হাজার ৭২৭ জন সুস্থ হয়েছেন। ফলে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত আছেন ৮২ হাজার ৬০ জন।
নাসিমা আরও জানান, ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড সাধারণ বেডের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৮৫। আইসিইউ বেডের সংখ্যা ২০২টি। সারাদেশে সাধারণ বেডের সংখ্যা ১৪ হাজার ৩৪৮টি ও আইসিইউ বেড ৪২১টি। আর বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৪ হাজার ৫২৩জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৬৪ হাজার ৫৯৮ জন।
ব্রিফিংয়ের করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন অধ্যাপক নাসিমা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, করোনা মোকাবিলায় তরল খাবার, কুসুম গরম পানি ও আদা চা পান করতে হবে। সম্ভব হলে মৌসুমী ফল খাওয়া ও ফুসফুসের ব্যায়াম করা। এ সময় ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। কারণ, এটি ফুসফুসের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।
চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সেদিন তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছিল আইইডিসিআর। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার।
ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি। ৭ম দফায় বাড়ানো ছুটি চলে ৩০ মে পর্যন্ত। ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি নেই। এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ভিত্তিক লকডাউন চলছে। তাই অফিস আদালতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সরঞ্জামাদি রাখা ও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮০ হাজার ২২৪ জন। সেই সঙ্গে বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ১ হাজার ২২৬ জনের। আর করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৫৪ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৫ জন।
করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে প্রথম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। টানা তিন দিন আক্রান্তে রেকর্ডের পর সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫৩৭ জন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনার আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ১৫২ জনের। করোনায় মোট মৃতের দিক থেকেও প্রথমে রয়েছে দেশটি। তবে দশটিতে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১০ লাখ ৮১ হাজার ৪৩৭ জন।
করোনায় আক্রান্তের থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৪১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৫৭ হাজার ১০৩ জনের। আর এ পর্যন্ত ব্রাজিলে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭ লাখ ১৫ হাজার ৯০৫ জন।
করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ায় মোট ৬ লাখ ২৭ হাজার ৬৪৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে আর দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৯৬৯ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬২ জন।
লকডাউন শিথিলের পর থেকে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারতে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ২৯ হাজার ৫৭৭ জন আর করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ১০৩ জনের এবং ৩ লাখ ১০ হাজার ১৪৬ জন মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
অন্যদিকে, সার্কভুক্ত ওপর দেশ পাকিস্তানে নতুন ৪০৭২ জনসহ সংক্রমিত ২ লাখ ২ হাজার ৯৫৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৩ জনসহ মোট মৃত্যু ৪ হাজার ১১৮ জনের। নেপালে শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৩০৯ জন, মৃত্যু ২৮ জন। ভুটানে ৭৮ শনাক্ত, মৃত্যু নেই। শ্রীলংকায় শনাক্ত এক হাজার ২০৩৩ জনের, নতুন মৃত্যু না থাকায় আগের সংখ্যা ১১ জনই রয়েছে।